সাত বছর পর ভাতা বাড়ছে ৫০–১০০ টাকা

সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে সব মিলিয়ে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা বাড়তে পারে। বরাবরের মতো এ খাতে থাকছে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি নয় এমন খরচও।

বাজেট ২০২৩–২৪
বাজেট ২০২৩–২৪লোগো: প্রথম আলো

সামাজিক সুরক্ষা খাতে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ কিছুটা বাড়ছে। সঙ্গে বাড়ছে কিছু কিছু কর্মসূচিতে ভাতাও। কোথাও বাড়ছে জনপ্রতি ৫০ টাকা, কোথাওবা ১০০ টাকা। এটুকু ভাতা সরকার বাড়াচ্ছে আবার সাত বছর পর। ভাতা কিছুটা বৃদ্ধির পাশাপাশি উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়বে।

চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ হতে পারে ১ লাখ ২৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে পরিমাণ বরাদ্দ থাকা উচিত, তা সরকার দিতে পারে না। এ কারণে এই খাতে এমন কিছু কর্মসূচি দেখানো হয়, যা বাস্তবে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিই নয়। সরকার ওই সব খাতকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি হিসেবে দেখায় এ খাতে মোট বরাদ্দ বেশি দেখানোর কৌশল হিসেবে।

যেমন ব্যাংকে স্থায়ী আমানত রাখলে যত হারে সুদ পাওয়া যায় এবং সঞ্চয়পত্রে সরকার যে সুদ দিচ্ছে—এই দুয়ের পার্থক্যকে সামাজিক সুরক্ষা বাবদ ব্যয় বলে দেখানো হচ্ছে। সরকারি চাকরিজীবীরা যে পেনশন পান, তা–ও সরকারের বিবেচনায় সামাজিক নিরাপত্তা। উভয় বিষয় নিয়ে আপত্তি তুলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিতে যেসব শর্ত দিয়েছে, তার মধ্যে সঞ্চয়পত্রের সুদ ও পেনশনের অঙ্ক সামাজিক সুরক্ষা খাতে না দেখানোর পরামর্শ রয়েছে।

সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি খাত নিয়ে গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বজলুল হক খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, সামাজিক সুরক্ষা খাত নিয়ে গোঁজামিল আছে। একই জিনিস বারবার দেখিয়ে খাতটিতে বরাদ্দ বেশি দেখায় সরকার। এ খাতে সংস্কারের গতিও অতি ধীর।

ভাতা বাড়ছে সাত বছর পর

আগামী অর্থবছরেও নগদ সহায়তা বা ভাতার জন্য থাকছে আটটি কর্মসূচি। চলতি অর্থবছরে এই আট কর্মসূচিতে বরাদ্দ রয়েছে ৪১ হাজার ৮২১ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ ৩ হাজার কোটি টাকা বেড়ে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে।

কর্মসূচি আটটি হলো বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা; হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের ভাতা; মা ও শিশুসহায়তা কর্মসূচি, বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা, শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও সম্মানী ভাতা এবং সরকারি কর্মচারীদের অবসর ভাতা।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরে এ আট কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ করা ৪৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে ৮ লাখের কাছাকাছি অবসরভোগী সরকারি কর্মচারীর অবসর ভাতা বা পেনশন বাবদ।

অবশ্য সরকার সাত বছর পর দেশের গরিব বয়স্ক নারী-পুরুষ, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা এবং প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতা কিছুটা বাড়াচ্ছে। কোনো কর্মসূচিতে বাড়ানো হচ্ছে ১০০ টাকা, কোনো কর্মসূচিতে আবার ৫০ টাকা। ভাতার পাশাপাশি উপকারভোগীর সংখ্যাও কিছুটা বাড়বে।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সরকারি কর্মচারীদের জন্য জাতীয় বেতনকাঠামোর প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। তখন বেতন-ভাতা একলাফে প্রায় দ্বিগুণ করা হয়। গরিব বয়স্ক নারী-পুরুষ এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতাদের ভাতা ছিল তখন মাসিক ৪০০ টাকা করে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তাঁদের এই ভাতা ১০০ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৫০০ টাকা, যা কার্যকর হয় ২০১৬ সালের জুলাই থেকে। এরপর আর বাড়েনি। যদিও এ সময় মূল্যস্ফীতির কারণে ক্রয়ক্ষমতা কমেছে।

সামাজিক সুরক্ষা খাত নিয়ে গোঁজামিল আছে। একই জিনিস বারবার দেখিয়ে খাতটিতে বরাদ্দ বেশি দেখায় সরকার। এ খাতে সংস্কারের গতিও অতি ধীর

বজলুল হক খন্দকার, অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

বর্তমানে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হয় ৫৭ লাখ ১ হাজার নারী-পুরুষকে। অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, আগামী বাজেটে এ ভাতাভোগী ১ লাখ বাড়ানো হবে। তাঁদের ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে হবে ৬০০ টাকা। এ ছাড়া বর্তমানে ২৪ লাখ ৭৫ হাজার বিধবাকে মাসিক ৫০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়। এ কর্মসূচিতেও এক লাখ ভাতাভোগী বাড়বে। আর ভাতা বাড়বে ৫০ টাকা। অর্থাৎ আগামী অর্থবছর থেকে বিধবারা ভাতা পাবেন ৫৫০ টাকা করে।

এখন মোট ২৩ লাখ ৬৫ হাজার প্রতিবন্ধী ভাতা পান। আগামী অর্থবছরে এ সংখ্যা ৫ লাখ ৩৫ হাজার বাড়িয়ে করা হবে ২৯ লাখ। তবে ভাতার পরিমাণ আগের মতো ৮৫০ টাকাই রাখা হচ্ছে।

খাদ্যনিরাপত্তায় বরাদ্দ বাড়বে

খাদ্যনিরাপত্তা ও কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় টিআর, জিআর, ভিডব্লিউবি, ওএমএস, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, ভিজিএফ ইত্যাদি ১১টি শ্রেণিতে ১৫ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে চলতি অর্থবছরে। আগামী অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ দুই হাজার কোটি টাকা বাড়তে পারে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার সাধারণ মানুষের কাছে কম দামে চাল ও আটা বিক্রি করে। আবার কাজের সুযোগ তৈরি করতে গ্রামে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়।

বাজেটে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির জন্য বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা বাড়তে পারে। বর্তমানে এ খাতে বরাদ্দ ৪ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। তবে শিক্ষাবৃত্তির হার বাড়বে না।

প্রাথমিকে বৃত্তির পরিমাণ ১৫০ ও মাধ্যমিকে ২০০ টাকা ২০১৫ সাল থেকে। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় ওই সময়ের ১৫০ টাকা এখনকার ৮০ টাকার সমান। মানবসম্পদে বিনিয়োগ বিবেচনায় পরিমাণটা ৫০০ টাকা করলে সরকারের খুব বেশি ক্ষতি হবে না।

রাশেদা কে চৌধূরী, শিক্ষা উপদেষ্টা, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকে বৃত্তির পরিমাণ ১৫০ ও মাধ্যমিকে ২০০ টাকা ২০১৫ সাল থেকে। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় ওই সময়ের ১৫০ টাকা এখনকার ৮০ টাকার সমান। মানবসম্পদে বিনিয়োগ বিবেচনায় পরিমাণটা ৫০০ টাকা করলে সরকারের খুব বেশি ক্ষতি হবে না।

আগামী অর্থবছরে কৃষি ভর্তুকি ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। করোনার কারণে এসএমই খাতকে সুদ ভর্তুকি বাবদ ৫ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। করোনার ঝুঁকি কমে যাওয়ায় এ শ্রেণিতে বরাদ্দ অনেকটাই কমবে নতুন বাজেটে।

১০০ কোটি টাকার জলবায়ু পরিবর্তন তহবিল, ১২৫ কোটি টাকার নারী উন্নয়ন ও নারী উদ্যোক্তাদের তহবিলসহ চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৯টি তহবিল ও কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ রয়েছে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। এ বরাদ্দ কিছুটা কমবে আগামী বাজেটে। কারণ, কোনো কোনো কর্মসূচি বাদ দেওয়া হতে পারে।

শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, জয়িতা ফাউন্ডেশনের মতো মোট ১৩টি কর্মসূচিতে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৭৫০ কোটি টাকা করা হতে পারে।

বরাদ্দ বাড়িয়ে দেখাতে যা করা হয়

সামাজিক সুরক্ষার ১১৫টি কর্মসূচির মধ্যে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা), খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, খোলাবাজারে বিক্রির (ওএমএস) মতো খাদ্যনিরাপত্তা কর্মসূচি যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে দুর্যোগসহায়তা কার্যক্রম। কিছু কিছু ঋণসহায়তা কার্যক্রম, উন্নয়ন খাতের ৫০টির মতো প্রকল্প, ৮টি কার্যক্রমসহ বিভিন্ন বিষয়কে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় দেখায় সরকার। এতে মোট সুফলভোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৫৩ কোটি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সুফলভোগীর সংখ্যা বেশি দেখাতে এমন প্রকল্প ও কর্মসূচিকে সরকার সামাজিক সুরক্ষা খাতে দেখায়, যা আসলে সামাজিক সুরক্ষা নয়। যেমন অর্থ বিভাগ জয়িতা ফাউন্ডেশনের সক্ষমতা উন্নয়ন ও ভবন নির্মাণ প্রকল্পকেও সামাজিক সুরক্ষার মধ্যে দেখিয়েছে।

আগামী অর্থবছরেও খাদ্যনিরাপত্তা ও কর্মসৃজন কর্মসূচির ১১ বিষয়, বৃত্তি বাবদ ছয়টি, নগদ ও খাদ্যসহায়তাসংক্রান্ত ১৭টি, ঋণসহায়তার ২টি, বিশেষ সম্প্রদায় ও জনগোষ্ঠীর ১৩টি, বিভিন্ন তহবিল ও কর্মসূচি ৯টি এবং ৫০টি উন্নয়ন কর্মসূচি বাবদ বরাদ্দ থাকছে। যেসব খাত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নয়, সেগুলোকেও বাজেটে এ খাতে দেখানো হচ্ছে।

গবেষক বজলুল হক খন্দকার বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যাপক সংস্কার দরকার। এ ক্ষেত্রে সামাজিক সহায়তা, সামাজিক বিমা ও শ্রমবাজারভিত্তিক কর্মসূচিকে মাথায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বরাদ্দের বড় অংশ গ্রামে যাচ্ছে। বৈষম্য রোধ করতে শহরেও ভাতা দেওয়া দরকার।

সূত্রঃ প্রথম আলো

Facebook
LinkedIn
Shopping Basket

Capital Market Risk Assessment Survey

Iram Hoque

Mohd. Iramul Hoque (Iram) completed his bachelor’s degree in Industrial Engineering in 2018 from Purdue University.

He joined Deloitte Consulting LLP as a Consulting Analyst based out of New York City having previously worked in similar roles at PricewaterhouseCoopers LLP & Landis+Gyr.

Iram left consulting and returned to Bangladesh to take up the family business. Realizing the opportunity in the capital market in Bangladesh, Iram worked relentlessly to found Columbia Shares & Securities Ltd in 2021.

Md Saiful Hoque

Md. Saiful Hoque received his bachelor’s degree in Civil Engineering from Columbia University in 1986 followed by a master’s degree from Texas A&M University in 1988. Upon completion of his Graduate Degree, he joined Gulf Interstate Engineering Company in Houston, USA serving as a Project Engineer.

He returned to Bangladesh in 1992 to join Columbia Enterprise Ltd., the family business of Shipping and Freight Forwarding services. In addition, he has built flourishing businesses manufacturing Garment’s Accessories and Fast-Moving Consumer Goods.