ভুয়া কাগজপত্রে’ ঋণ দেয় সোনালী ব্যাংক!

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় করপোরেট শাখা

নজরুল ইসলাম:ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ঋণের জন্য আবেদন করে দুটি প্রতিষ্ঠান। স্বল্প সময়ে ঋণও পেয়ে যায় তারা। তবে ব্যাংকের কর্মকর্তারা দলিলপত্র যাচাই-বাছাই ও প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ সঠিকভাবে সম্পাদন ও সংরক্ষণ করেননি। পাশাপাশি ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে যথাযথভাবে গ্রাহক নির্বাচন, মঞ্জুরি ও বিতরণ করা ঋণগুলো তদারকি এবং ব্যাংকের পাওনা আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এতে যথাসময়ে ঋণের টাকা আদায় না করায় খেলাপিও হয়। ঘটনাটি ঘটেছে সোনালী ব্যাংক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় করপোরেট শাখায়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে। এ ঘটনায় দুটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে। সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া মামলা দুটি দায়ের করেছেন, যা তদন্ত করছেন উপপরিচালক রাউফুল ইসলাম।

দুটি মামলায়ই শাখাপ্রধান ড. মো. হাফিজুর রহমানকে এক নম্বর আসামি ও শাখা কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেনকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংক কর্মকর্তা আমির উদ্দিন ও লিমা ট্রেডিংয়ের মালিক লিমা রহমান এবং ইউনিভার্সেল টেকনোলজিক্যাল সার্ভিসেস লিমিটেডের মালিক কেএম রেজাউল হোসাইনকে একটি করে মামলায় আসামি করা হয়।

দুদকের এজাহারে অভিযোগ করা হয়, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে কাগুজে প্রতিষ্ঠান লিমা ট্রেডিংয়ের নামে রেকর্ডপত্র তৈরি করে ১৫ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়। ঋণগ্রহীতা লিমা রহমানের নাম জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী লিমা আক্তার। বন্ধকি সম্পত্তি শনাক্ত ও চিহ্নিত করা ছাড়াই ঋণ বিতরণ করা হয়। ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর তারিখে সুদসহ পাওনা দাঁড়ায় ৩২ লাখ ৮৪ হাজার ৬১৩ টাকা।

২০১১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সোনালী ব্যাংক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় করপোরেট শাখায় চলতি হিসাব খোলেন লিমা ট্রেডিংয়ের মালিক লিমা রহমান। প্রতিষ্ঠানটি গার্মেন্ট অ্যাকসেসরিজ সরবরাহের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ২০১১ সালের ১০ নভেম্বর লিমা রহমান ১৫ লাখ টাকার ঋণের আবেদন করেন। প্রস্তাবিত জামানতি সম্পত্তির মূল্যায়ন করে ১৬ নভেম্বর ১৫ লাখ টাকার ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়, যার মেয়াদ ধরা হয় ২০১২ সালের ১৫ নভেম্বর। লিমা রহমানের স্বামীর নামে থাকা জামানতি সম্পত্তির মূল্যায়ন ও মর্টগেজ দলিল সম্পাদন করেন সোনালী ব্যাংক শাখা কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন ও শাখা প্রধান ড. মো. হাফিজুর রহমান। ঋণ মঞ্জুরি ক্ষমতা শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের আর্থিক ক্ষমতার আওতাভুক্ত হওয়ায় প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন নেয়া হয়নি।

অনুসন্ধানে দুদক মেসার্স লিমা ট্রেডিং নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। মিরপুর মডেল থানাও জানিয়েছে, ওই ঠিকানায় কখনোই ওই প্রতিষ্ঠান ছিল না। বাড়িমালিক নুরুজ্জামানও একই কথা জানান। তফসিলের সম্পত্তির ক্রয় দলিল পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঋণগ্রহীতা লিমা রহমানের স্বামী মুজিবুর রহমান ও তার ভাই হাবিবুর রহমান মোট ২০ শতাংশ জমির মালিক। তার মধ্যে মুজিবুর রহমান ১৩ শতাংশের মালিক। জমাভাগ নথি অনুযায়ী ২০.১ শতাংশ জমি দুই ভাইয়ের নামে রেকর্ড হয়। ঋণ গ্রহণকালে মুজিবুর রহমানের ১৩ শতাংশ জমি ব্যাংকের কাছে বন্ধক দেয়া হয়। বন্ধকি দলিলে জমির চৌহদ্দি যথাযথভাবে উল্লেখ না থাকায় জমিটি নিলামে বিক্রি করে ঋণের অর্থ সমন্বয় করা যায়নি। লিমা রহমান ভুয়া ঠিকানা দেখিয়ে ঋণের জন্য আবেদন করে অন্যের মালিকানাধীন জমি মর্টগেজ দেখিয়ে ১৫ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন।

শাখার ঋণ ও অগ্রিমের দায়িত্বে নিয়োজিত শাখা অফিসার শাহাদাত হোসেন দলিলপত্র যাচাই-বাছাই ও প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ সঠিকভাবে সম্পাদন এবং সংরক্ষণ করেননি। পাশাপাশি ড. মো. হাফিজুর রহমান শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে সঠিকভাবে গ্রাহক নির্বাচন, মঞ্জুরি ও বিতরণ, দলিলাদি সম্পাদন, ঋণগুলো তদারকি বা নজরদারি এবং পরে ব্যাংকের পাওনা আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় ঋণ ঝুঁকিপূর্ণ ও শ্রেণিকৃত হয়ে আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এতে ব্যাংকের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ব্যাংক গঠিত পরিদর্শন ও নিরীক্ষা দলও সরেজমিনে

পরিদর্শনকালে ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের অনুকূলে দায়বদ্ধ বন্ধকি সম্পত্তি খুঁজে পায়নি। প্রক্রিয়াটির সঙ্গে জড়িত ড. মো. হাফিজুর রহমান, শাহাদাত হোসেন ও ঋণগ্রহীতা লিমা রহমানকে আসামি করা হয়, যার মামলা নম্বর ১৫। তারা দণ্ডবিধির ৪০৯/ ৪২০/ ৪৬৭/ ৪৬৮/ ৪৭১/ ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছন।

দুদকের এজাহারে অভিযোগ করা হয়, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে কাগুজে প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সেল টেকনোলজিক্যাল সার্ভিসেস লিমিটেডের নামে রেকর্ডপত্র তৈরি করে সিসি খাতে ১০ লাখ ও এসএমই খাতে পাঁচ লাখসহ মোট ১৫ টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। ঋণগ্রহীতার নাম কেএম রেজাউল হোসাইন। বন্ধকি সম্পত্তি শনাক্ত ও চিহ্নিত করা ছাড়াই ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর তারিখে সুদসহ পাওনা দাঁড়ায় ৪৪ লাখ ৮৬ হাজার ৫০৯ টাকা। ২০১১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সোনালী ব্যাংক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় করপোরেট শাখায় চলতি হিসাব খোলেন ইউনিভার্সেল টেকনোলজিক্যাল সার্ভিসেস লিমিটেডের মালিক কেএম রেজাউল হোসাইন। তার হিসাবটিতে শনাক্তকারী হিসেবে স্বাক্ষর করেন সহকারী ব্যবস্থাপক আমীর উদ্দিন। ২০১১ সালের ৯ অক্টোবর রেজাউল ২০ লাখ টাকার সিসি (হাইপো) ঋণের জন্য আবেদন করেন। ৩১ অক্টোবর ১০ লাখ টাকার সিসি ঋণ মঞ্জুর করা হয়, যার মেয়াদ ছিল ২০১২ সালের ৩১ অক্টোবর। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২১ সালের ১২ জানুয়ারির এক তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, কেএম রেজাউল হোসাইন অন্যের মালিকানাধীন জমি মর্টগেজ দেখিয়ে শাখা কর্মকর্তাদের সহায়তায় ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। শাখা ব্যবস্থাপক ড. মো. হাফিজুর রহমান ও  শাখা কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বন্ধকি সম্পত্তির অস্তিত্ব যাচাই না করে নিজ ক্ষমতার মধ্যে ১০ লাখ টাকার সিসি ও পাঁচ লাখ টাকার এসএমই লোন দিয়ে একে অন্যের সহায়তায় ১৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন, যা দণ্ডবিধির ৪০৯/ ৪২০/ ৪৬৭/ ৪৬৮/ ৪৭১/ ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ঘটনায় জড়িত ড. মো. হাফিজুর রহমান, শাহাদাত হোসেন, ঋণগ্রহীতা কেএম রেজাউল হোসাইন ও আমির উদ্দিনকে আসামি করা হয় (মামলা নম্বর ১৪)।

অভিযোগ প্রসঙ্গে হাফিজুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমি আদালত থেকে জামিন নিয়েছি। তদন্ত কর্মকর্তা বন্ধকি সম্পত্তি শনাক্ত করতে পারেননি। বাংলাদেশ ব্যাংক অভিযোগ থেকে আমাকে অব্যাহতি দিয়েছে। ভুয়া অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক মামলা করেছে। দুদক সেকেন্ডম্যান, থার্ডম্যান ও ফোর্থম্যানকে ধরেইনি। মামলায় এজিএম হেলাল উদ্দিন, অ্যাডভোকেট শাহরিন সুলতানা মালা ও আমিনুল ইসলামের নামই নেই। ক্রেডিট কমিটি ঋণ অনুমোদন দিয়েছে, তাদের নামও এলো না। শাহাদাত হোসেন এক নম্বর আসামি হওয়ার কথা। তাকে করা হয়েছে দুই নম্বর আসামি। আমির উদ্দিন অ্যাকাউন্ট না খুললে তো আমরা লেনদেনও করতে পারতাম না। লিমা ট্রেডিং দুদকের ভয়ে সব টাকা পরিশোধ করে দিয়েছে। সোনালী ব্যাংক লোকাল অফিস শাখা থেকে নেয়া ঋণ ১০০ বছরেও তারা আদায় করতে পারেনি। সেটা কেউ লেখে না। সোনালী ব্যাংক কিছুই করতে পারেনি। ১৮ হাজার কোটি টাকা মাফ করে দিয়েছে।’

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আফজাল করিম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। আর্থিক জালিয়াতি হলে তো দুদকে মামলা হয়ই। আমাদের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

আসামিদের কেউ তো অবসরে চলে গেছেনÑতখন তিনি বলেন, ‘তাহলে অবসরোত্তর সুবিধা পাবে না। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী মানিসোর্সসহ অন্যান্য মামলা করার সুযোগ আছে। ব্যাংক সেটি করবেও। আমি খোঁজ নিচ্ছি।’

সূত্রঃ শেয়ার বিজ 

Facebook
LinkedIn
Shopping Basket

Capital Market Risk Assessment Survey

Iram Hoque

Mohd. Iramul Hoque (Iram) completed his bachelor’s degree in Industrial Engineering in 2018 from Purdue University.

He joined Deloitte Consulting LLP as a Consulting Analyst based out of New York City having previously worked in similar roles at PricewaterhouseCoopers LLP & Landis+Gyr.

Iram left consulting and returned to Bangladesh to take up the family business. Realizing the opportunity in the capital market in Bangladesh, Iram worked relentlessly to found Columbia Shares & Securities Ltd in 2021.

Md Saiful Hoque

Md. Saiful Hoque received his bachelor’s degree in Civil Engineering from Columbia University in 1986 followed by a master’s degree from Texas A&M University in 1988. Upon completion of his Graduate Degree, he joined Gulf Interstate Engineering Company in Houston, USA serving as a Project Engineer.

He returned to Bangladesh in 1992 to join Columbia Enterprise Ltd., the family business of Shipping and Freight Forwarding services. In addition, he has built flourishing businesses manufacturing Garment’s Accessories and Fast-Moving Consumer Goods.