সরকার আড়াই মাসে ১৩২ কোটি ডলার সহায়তা চায়

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট শুরু হওয়ার আগেই উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর কাছে ১৩২ কোটি মার্কিন ডলারের সহায়তা চেয়েছে সরকার। আড়াই মাসে অর্থাৎ আগামী ৩০ জুনের মধ্যে বাজেট সহায়তা হিসেবে সরকার ঋণ হিসেবে এ অর্থ আশা করছে।

বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে জুনের মধ্যে ৫০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে, তা আগেই ঠিক হয়ে আছে। আরও দুই উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) ও জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) এবং কোরিয়া সরকারের কাছে মোট ৮২ কোটি ডলার চেয়েছে সরকার। এর মধ্যে এআইআইবির কাছে ৪০ কোটি, জাইকা থেকে ৩২ কোটি ও কোরিয়ার কাছে ১০ কোটি ডলার চাওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থ মিলিয়ে এ দফায় সরকার মোট ১৩২ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা আশা করছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩ হাজার ৮৬০ কোটি টাকার মতো (প্রতি ডলার ১০৫ টাকা ধরে)।

এ বাজেট সহায়তার ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ৯ এপ্রিল কোরিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপপ্রধানমন্ত্রী কিয়ংগো চু, এআইআইবির প্রেসিডেন্ট জিন লিকুয়ান এবং জাইকার প্রেসিডেন্ট তানাকা আকিহিকোকে আলাদা চিঠি পাঠিয়েছেন।

অর্থমন্ত্রীর চিঠিতে দেখা যায়, তিনি এআইআইবি, কোরিয়া সরকার ও জাইকার কাছে যে অর্থ চেয়েছেন, তা মূলত তাদের সঙ্গে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কো-ফাইন্যান্সিং বা সহ–অর্থায়নের অর্থ। কোভিড-১৯–এর কারণে যে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তা থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে এডিবি প্রথমে টেকসই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কর্মসূচি বা এসইআরপি–১ ও পরে এসইআরপি-২ হাতে নেয়। আজ সোমবার ম্যানিলায় অনুষ্ঠেয় এডিবির ব্যবস্থাপনা পর্যালোচনা বৈঠকে বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি উপস্থাপনের কথা রয়েছে।

—রপ্তানি ও প্রবাসী আয় যেহেতু সন্তোষজনক নয়, আর রিজার্ভও কমতির দিকে, সেহেতু এটুকু বাজেট সহায়তা পাওয়া গেলেও ভালো। বাজেট সহায়তার বড় সুবিধা হচ্ছে, এর বিপরীতে কোনো শর্ত পালনের বালাই থাকে না।

—এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম, অর্থ উপদেষ্টা, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার দিয়েছে বাংলাদেশকে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাস্তবে যে পরিমাণ বাজেট সহায়তা দরকার, সে তুলনায় বিশ্বব্যাংক ও অন্য তিন জায়গা থেকে যা পাওয়া যাবে, তা সামান্যই। তবু এ অঙ্ক একধরনের দম দেবে, যদি না পণ্য আমদানি করতেই তা ব্যয় হয়ে যায়। কিন্তু ডলার–সংকট তো থাকছেই। তাদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের সঙ্গে ডলারের জোগান বৃদ্ধির কোনো কর্মসূচি থাকলে বরং তা স্বস্তিকর হতো।’

এআইআইবি

এআইআইবির প্রেসিডেন্টকে লেখা চিঠিতে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ইতিপূর্বে এসইআরপি-১–এর আওতায় এআইআইবি থেকে ২৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। এসইআরপি-২–এর আওতায় পাওয়ার মতো রয়েছে আরও ৪০ কোটি ডলার। বাংলাদেশ এখন এ অর্থ পেতে চায়।

চিঠিতে বন্ধ করে দেওয়া ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের দায় মেটাতে; নিম্ন আয়, প্রান্তিক কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দিতে; ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) কিনতে, কর ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে এবং এনবিআরের আয়কর ও ভ্যাট বিভাগের মধ্যে তথ্য বিনিময়ের ব্যবস্থা দাঁড় করাতে বড় অঙ্কের অর্থ দরকার বলে উল্লেখ করা হয়। কোরীয় উপপ্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতেও এসব কথা বলা হয়েছে।

কোরিয়া ও জাইকা

কোরিয়া সরকারের কাছেও এসইআরপির আওতায় ১০ কোটি ডলার চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী। কোরিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপপ্রধানমন্ত্রী কিয়ংগো চুকে লেখা চিঠিতে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, কোরিয়া সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল (ইডিসিএফ) থেকে বাংলাদেশ আগেও ১০ কোটি ডলার পেয়েছে। এখন দরকার আরও ১০ কোটি ডলার।

এদিকে জাইকা প্রেসিডেন্ট তানাকা আকিহিকোকে লেখা চিঠিতে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি, বন্যার কারণে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়া—এসব কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। ভর্তুকি পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও সারের দাম কিছুটা সমন্বয় (বৃদ্ধি) করেছে সরকার। উন্নয়ন বাজেটও কাটছাঁট করা হয়েছে। আর আগামী অর্থবছর থেকে জ্বালানি মূল্যের ব্যাপারে সময়ভিত্তিক ব্যবস্থা চালু করা হবে।

জাইকা থেকে পাওয়া ৩২ কোটি ডলার অর্থ সামাজিক ও অবকাঠামো উন্নয়ন, সামাজিক সুরক্ষা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির কাজে ব্যয় করা হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

প্রথম আলোর পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে গত শনিবার মুঠোফোনে না পেয়ে বিষয়বস্তু উল্লেখ করে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। তবে তিনি কোনো জবাব দেননি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘রপ্তানি ও প্রবাসী আয় যেহেতু সন্তোষজনক নয়, আর রিজার্ভও কমতির দিকে, সেহেতু এটুকু বাজেট সহায়তা পাওয়া গেলেও ভালো। বাজেট সহায়তার বড় সুবিধা হচ্ছে, এর বিপরীতে কোনো শর্ত পালনের বালাই থাকে না। জুনের আগে বাজেট সহায়তা যত বেশি পাওয়া যাবে, ততই তা বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে।’

Source: Prothom Alo

Shopping Basket