পুঁজিবাজারে আপাতত ফ্লোর প্রাইস (শেয়ারদর কমার সর্বনিম্ন সীমা) প্রত্যাহার হওয়ার সম্ভাবনা নেই। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফোরামের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুসারে, বাজার স্বাভাবিক অবস্থানে না আসা পর্যন্ত ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হচ্ছে না।
বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ও ইবিএল সিকিউরিটিজের সিইও গণমাধ্যমকে জানান, আপাতত ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া হচ্ছে না। বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পুঁজিবাজারে লেনদেনে গতি ফিরলেই ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেয়া হবে।
বৈঠকে অংশ নেয়া একজন জানান, এখনই ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার ব্যাপারে কমিশনে কোনো আলোচনা হয়নি। সূচক ৬ হাজার ৭০০ অতিক্রমের পর ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া হতে পারে।
পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক দরপতন থামাতে গত বছরের ২৮ জুলাই ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি। পরে ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর ১ শতাংশ সার্কিট ব্রেকার আরোপ করে ১৬৯ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির জারি করা আদেশ অনুসারে, এসব কোম্পানির শেয়ারদর দিনে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারছে। অন্যদিকে এ কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বাড়ার ঊর্ধ্বসীমা ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর জারি করা নির্দেশনা অনুসারে কার্যকর হচ্ছে। অর্থাৎ শেয়ারদর ২০০ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ হারে সার্কিট ব্রেকার প্রযোজ্য আছে। আর শেয়ারদর ২০১ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে হলে ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্কিট ব্রেকার এবং ৫০১ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত শেয়ারদর থাকলে সেক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ কার্যকর রয়েছে। এছাড়া শেয়ারদর ১ হাজার টাকার বেশি এবং ২ হাজার টাকা পর্যন্ত ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে, ২ হাজার টাকার ওপরে এবং ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ৫ শতাংশ এবং ৫ হাজার টাকার বেশি হলে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্কিট ব্রেকার কার্যকর রয়েছে।
পুঁজিবাজার পরিস্থিতি: গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৭ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২১৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা আগের দিন ছিল ৬ হাজার ১৯৯ পয়েন্টে। ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল ৩ দশমিক ২৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৫৯ দশমিক ৬৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে, যা আগের দিন ছিল ১ হাজার ৩৫৬ দশমিক ৩৮ পয়েন্টে। ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ দিনের ব্যবধানে ২ দশমিক ২১ পয়েন্ট বেড়ে গতকাল ২ হাজার ২২০ দশমিক ৯৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের দিন শেষে যা ছিল ২ হাজার ২১৮ দশমিক ৭৭ পয়েন্টে। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪২০ কোটি ৬৬ লাখ টাকারা শেয়ার। আগের দিন এ লেনদেন ছিল ২৬১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩০৮টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ১০৬টির, কমেছে ৫৬টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১৪৬টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।
অন্যদিকে চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) নির্বাচিত সূচক সিএসসিএক্স গতকাল ১৫ দশমিক ৩০ পয়েন্ট বেড়ে ১০ হাজার ৯৮৫ দশমিক ৪১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ১০ হাজার ৯৭০ দশমিক ১০ পয়েন্টে। সিএসইর সব শেয়ারের সূচক সিএএসপিআই গতকাল ২৭ দশমিক ২৮ পয়েন্ট বেড়ে ১৮ হাজার ৩২৬ দশমিক শূন্য ২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল ১৮ হাজার ২৯৮ দশমিক ৭৪ পয়েন্টে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ১৩৭টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৪৬টির, কমেছে ৪০টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৫১টির বাজারদর। গতকাল সিএসইতে ৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
সূত্রঃ বনিক বার্তা